ত্রিপুরার বাংলা গল্পচর্চাঃ ‘রবি’ থেকে ‘নবজাগরণ’
-ডঃ মীনাক্ষী পাল
অযুত বৈচিত্র্যে ভরপুর মানুষের জীবনে গল্প শোনা এবং বলার আদিম বৃত্তি ইতিহাসের পথ অনুসরণ করে যখন বর্তমানে এসে পৌঁছয়,তখন তাতে শিল্পীর সচেতন কৌশলে বক্তব্য ও উপস্থাপনায় যুগান্তকারী পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। সেই দিক থেকে তীক্ষ্ণ ভাবগত ঐক্যে সংহত গল্প হয়ে উঠে প্রাণবন্ত এবং বাহুল্যবর্জিতভাবে সরল গতিকে অব্যাহত রেখেই গল্পপাঠ ভিন্ন মাত্রা যোজন করে।সেজন্যই সমকালীন জীবনের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার সঙ্গে তার আত্মিক যোগ গড়ে উঠে।সাহিত্য মানে জীবনের দর্পণ একথা যেমন সত্য,তেমনি ছোটগল্পে শিল্পী জীবনের দৃশ্যমান উপলব্ধির একটি বিশেষ জায়গা জুড়ে থাকে এবং হয়ে উঠে প্রাচুর্য্যতায় বৈচিত্র্যময়।
ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতে ত্রিপুরা ছিল রাজন্যশাসিত একটি দেশীয় রাজ্য।এবং সেই রাজন্যশাসিত ত্রিপুরা রাজ্যে প্রাত্যহিক জীবনচর্চা থেকে শুরু করে রাজকার্য সবকিছুতেই ছিল বাংলা ভাষার প্রাধান্য।প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে,রবীন্দ্রনাথ এবং ত্রিপুরার সম্পর্ক এই বাংলা ভাষাকেই কেন্দ্র করে ১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দে (“ভগ্নহৃদয়”১৮৮১খ্রিঃ কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে) সুদৃঢ় হয়েছিল ত্রিপুরার রাজবংশের ইতিহাসের ১৮১তম(“ত্রিপুরায় অন্য রবীন্দ্রনাথ”-থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে) রাজা বীরচন্দ্র মাণিক্যের রাজত্বকালে । শুধু বাংলা ভাষাই নয়,বাংলা সংস্কৃতির প্রতিও ছিল ত্রিপুরার প্রাচীন রাজন্যবর্গের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা,এবং বলা বাহুল্য সেই মোহের টানেই সম্ভবত ত্রিপুরায় রাজ আমল থেকেই বাংলা ভাষা রাজভাষার সম্মান পায় ককবরকের বদলে, সেটা বাঙালি হিসেবে নিঃসন্দেহে প্রশংসা ও সম্মানের দাবি রাখে।এই প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের মন্তব্য নিম্নে দেওয়া হল-
“ যে সংস্কৃতি, যে চিত্তোৎকর্ষ দেশের সকলের চেয়ে বড়ো মানবিক সম্পদ,একদা রাজারা তাকে রাজশ্বর্য্যের প্রধান অঙ্গ বলে মনে করতেন ।” ১
মহারাজা বীরচন্দ্রের রাজত্বকাল(১৮৬২-১৮৯৬খ্রিঃ) থেকেই ত্রিপুরায় বাংলা ভাষায় কাব্য-কবিতা,পদাবলী-সঙ্গীত চর্চা চলত বাংলা ভাষাতেই। তার মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য বীরচন্দ্রের রচিত, ‘অকাল কুসুম’, ‘হোরী’, ‘ঝুলন’, ‘উচ্ছ্বাস’, ‘প্রেম মরিচিকা’, ‘সোহাগ’ ইত্যাদি।যদিও ‘রাজমালা’র
সম্পাদক কালীপ্রসন্ন সেনের ‘রবি’ পত্রিকায়(১৯২৫খ্রিঃ) প্রকাশিত একটি প্রবন্ধ থেকে জানা যায়,মহারাজা গোবিন্দ মাণিক্যের সময়ে(১৬৬০-১৬৭৩খ্রিঃ) বৃহন্নারদীয় পুরাণ বাংলাতে অনুবাদিত হয় এবং তিনি আরও জানান তার প্রায় দেড় শতাধিক বছর পূর্বে ও পরে ‘রামায়ন’, ‘মহাভারত’, ‘ভাগবত’, ‘বিবিধ পুরাণ’এর অনুবাদও করা হয়েছিল। মহারাজা দ্বিতীয় ধর্মমাণিক্য(১৭১৪-১৭২৯ খ্রিঃ) বাংলা ভাষায় মহাভারতের অনুবাদ করিয়েছিলেন,কিন্তু মুদ্রাযন্ত্রের প্রচলন না থাকায় সে সকল গ্রন্থ বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। তাছাড়াও বিভিন্ন সময়ে রচিত রাজ আমলের উল্ল্যেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- ‘কৃষ্ণমালা’, ‘চম্পকবিজয়’, ‘শ্রেণিমালা’, ‘গাজীনামা’ ইত্যাদি।
ত্রিপুরার বাংলা সাহিত্যে কাব্য-কবিতা ও প্রবন্ধ চর্চা রাজআমল থেকে শুরু হলেও ত্রিপুরায় গল্পসাহিত্যের হাতেখড়ি হয় ‘কিশোর সাহিত্য সমাজ’এর উদ্দ্যেগে প্রকাশিত ‘রবি’(১৯২৪খ্রিঃ/১৩৩৪ ত্রিপুরাব্দ) নামক সাহিত্য পত্রের হাত ধরে।
‘রবি’
নামক সাহিত্য পত্রিকার প্রথম বর্ষের তৃতীয় সংখ্যায় প্রথম গল্প প্রকাশিত হতে শুরু করে ১৩৩৪ ত্রিপুরাব্দে অর্থাৎ ১৯২৪ খ্রিঃ।গল্পটি ছিল জ্যোতিপ্রভা দত্তের, ‘স্নেহের জয়’।গল্পটিতে যদিও একটি পারিবারিক জীবনের নিত্যনৈমিত্তিক সুখ-দুঃখ,মান-অভিমান,দ্বন্দ-কলহের কাহিনী আশ্রিত,তবুও গল্পশেষে দেখা যায় ব্যাক্তি স্বার্থ হার মানে নিয়তির অমোঘ নির্দেশনার কাছে।একদিকে পারিবারিক জীবনের টানাপোড়েন,অপরদিকে নিজ সন্তানের জীবন রক্ষার তাগিদে নিজ কৃতকর্মের ভুল শোধরে নেওয়ার তাগিদে স্নেহের জয় সাধিত হয়,সম্ভবত সেখানেই গল্পনামের সার্থকতা।সর্ব শক্তির উর্ধে মানুষের মানবিক অনুভুতি স্নেহ-প্রেম-ভালোবাসা,একথাই গল্পের মাধ্যমে পাথকদের সামনে তুলে ধরা ছিল লেখকের অভিপ্রায় এবং সেজন্যই লেখক গল্পের শেষের দিকে গল্পের নায়ক অমিয়কুমারের জবানীতে বলিয়ে নেন-
‘কাকীমা তোমাকে কাঁদাইয়াছি তাই আমার এই শাস্তি,তবে বুঝি তোমার কোলে পৌঁছাইয়া দিলেই আমার সুধা ভাল হইবে’ । ২
এই অমিয়কুমারের পরিচয় সম্পর্কে লেখক জানিয়েছেন ,অমিয় যখন দু’বছরের শিশুপুত্র তখন তার কাকীমা অপর্ণার চার বছরের পুত্র রণজিৎকে মৃত্যু নামক অমোঘ নিয়তি টেনে নিয়ে যায় ও খালি করে দিয়ে যায় অপর্ণার কোল।কিন্তু সেই কোল আবার পূর্ণ করে দেন অমিয়কুমারের মা শশীমূখী নিজ কনিষ্ঠ পুত্রকে অপর্ণার কোলে দিয়ে যখন বলেন সেই হলো তার পুত্র এখন থেকে।সেই দিন থেকে অপর্ণার হাত ছাড়া হয়নি অমিও এবং অমিয়কে পেয়ে অপর্ণা তার পুত্রশোক ভুলে নিবিড় শান্তি অনুভব করতে লাগলেন এবং অমিয়কে শান্তি নামে ডাকতে শুরু করেন সেই থেকেই।যদিও অপর্ণার স্বামীর কর্মসূত্রে তারা দুজনকেই বাড়ি থেকে দূরে থাকতে হয় এবং নিজ পুত্র মারা যাবার পর ছুটি কাটাতে বাড়ীতে এসেছিলেন ও শান্তিকে পেয়েছিলেন এবং ছুটি শেষে তাদের কর্মস্থলে ফেরার সময় শান্তিও কাকীমার আচল ধরে তাদের সঙ্গেই চলে যায়।সেই থেকেই সে কাকীমার কাছে নিজ পুত্রের মত বড় হতে লাগল,এভাবে কয়েক বছর কাটার পর শান্তির মা বাবা ও বড় ভাই অনিলকুমার মারা যায় গ্রামের মড়কে, কলেরা তাদের তিনজনকে গ্রাস করে নেয় এবং বংশের একমাত্র ও শেষ প্রদীপ অমিয়কুমার(শান্তি) কলকাতায় কাকীমার কাছেই সযত্নে লালিত হতে থাকে।শান্তির কাকা তখন কলকাতায় সওদাগরী অফিসে চাকরী করতেন।তারপর প্রায় কুড়ি বছর কেটে যায়,শান্তি এম,এ পাশ করে এবং ঢাকা বারে প্র্যাক্টিসরত উকিল ব্রজমোহন বাবুর মেয়ের সঙ্গে শান্তির নিজ ইচ্ছাতেই বিয়ে করিয়ে দেন অপর্ণা ও কাকা নরেন্দ্রবাবু।বিয়ের পর থেকেই শান্তিকে যেন বদলে যেতে দেখা যায় যখন সে শ্বশুর ও শ্রীর সঙ্গে ঢাকায় চলে যায় কাকীমা ও কাকাকে একা ফেলে,যদিও সে যাওয়ার আগে কথা দিয়েছিল তিন চারদিনের মধ্যে ফিরে আসবে,কিন্তু তা আর হলো না। চতুর কূটবুদ্ধি সম্পন্ন উকিল শ্বশুরের উমেদারীতে সে আস্তে আস্তে সে ঢাকা কলেজে অধ্যাপনার কাজে ঢুকে পড়ে এবং একটি সন্তান(সুধাংশু) ও পত্নীসহ সুখে দিন কাটাতে লাগে ঢাকা শহরেই। অপরদিকে, যে কাকীমার আচলের নিধি,চোখের মণি ছিল সেই শান্তি দু’বছর বয়স থেকে সেই কাকীমাকে সে ভুলতে লাগল ধীরে ধীরে সুউপার্জনশীল অমিয়কুমারকে নানান কুপরামর্শ দিয়ে কাকা-কাকীমার থেকে মন ঘোরাতে সচেষ্ট হলেন। শুধু তাই নয় দরিদ্র বৃদ্ধ কাকা-কাকীমা যদি কোন প্রয়োজনে টাকা খোঁজে বসেন ,সেই ভয়ে তার থেকে পালাতে যে শান্তি অন্তত যেতে না পারলেও চিঠি লিখত মাঝেমধ্যে,তাও বন্ধ করে দিল।কিন্তু,গল্পের শেষের দিকে দেখা যায় সেই কাকীমা’কে তার আবার প্রচণ্ডভাবে মনে পড়ল,যখন তার নিজের রক্ত শিশুপুত্র সুধাংশুর(সুধা) নিঊমোনিয়া ধরা পড়েছে এবং ডাক্তার জানিয়ে দিয়েছে বাঁচার আশা খুবই কম । মূহুর্তে বিত্তশালী প্রতিষ্ঠিত অধ্যাপক অমিয়কুমারের পায়ের নীচের মাটি সরে যেতে লাগল এবং উপলব্ধি করল দরিদ্র কাকীমার স্নেহের কথা,সেই স্নেহই যে তার প্রতিষ্ঠিত জীবনে করতে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিল একদিন,সেটা তার আর বুঝতে দেরী হল না।সে বুঝতে পারল,তার সন্তানকে যদি কেউ ভালো করতে পারে , সে তার কাকীমা। সেই উপলব্ধি থেকেই সেই কন্ক্নে শীতের সকালে স্ত্রী-পুত্র সহ কাকীমার কাছে উপস্থিত হয়ে কাকীমার কোলে সুধাকে দিয়ে ক্ষমা চেয়ে নেয় ও গল্পের একদম অন্তিম পর্যায়ে দেখা যায় ঠাকুরমার কোলে নিশ্চিত হয়ে সুধা তখন ঘুমাচ্ছে।
এছাড়াও ‘রবি’ পত্রিকায় গল্প লেখেন দীনেশ কুমার রায়(গল্পনাম-‘নিষ্কৃতি’, প্রথম বর্ষ, প্রথম সংখ্যা) ,যতীন্দ্রমোহন গুপ্ত(গল্পনাম-‘ কোল ঠাকুরদাদার রূপকথা’, দ্বিতীয় বর্ষ, দ্বিতীয় সংখ্যা), ত্রিগুন নন্দরায়(গল্পনাম- ‘তাজমহল’, চতুর্থ বর্ষ, প্রথম সংখ্যা), শ্রী অরুণ(গল্পনাম-‘যৌবন জাগরণ’, চতুর্থ বর্ষ, দ্বিতীয় সংখ্যা),শ্রী অরুণ কুমার সেন ( গল্পনাম-‘দুঃখের কথা’, চতুর্থ বর্ষ, তৃতীয় সংখ্যা), শ্রী অরুণ (গল্পনাম-‘শুভ গ্রাম’, চতুর্থ বর্ষ, চতুর্থ সংখ্যা), শ্রী অরুণ কুমার সেন(গল্পনাম-‘শেষের ডাক’, চতুর্থ বর্ষ, চতুর্থ সংখ্যা), ললিত কিশোর দেববর্মা(গল্পনাম-‘ফুলের মরণ’), গোলাপ দেবী(গল্পনাম- ‘অজগর সাপের গল্প’, রূপকথাধর্মী গল্প, প্রথম বর্ষ, চতুর্থ সংখ্যা),অজিতবন্ধু দেববর্মা(গল্পনাম-‘দায়মুক্ত’, ষষ্ঠ বর্ষ, প্রথম সংখ্যা ও গল্পনাম-‘পরিচয়’, ষষ্ঠ বর্ষ এবং গল্পনাম-‘প্রায়শ্চিত্ত’, ষষ্ঠ বর্ষ, চতুর্থ সংখ্যা) প্রমুখ ।তবে সকলের গল্প পাওয়া যায়নি, তথ্যসূত্রে কেবলমাত্র গল্পকার ও গল্পনাম জানা যায়।প্রসঙ্গত উল্ল্যেখ্য যে, ‘রবি’ পত্রিকা ছাড়াও ত্রিপুরার সাহিত্যজগতে
কয়েকটি প্রাচীন সাহিত্য পত্রিকা ছিল ,যেখানে প্রায় নিয়মিত সাহিত্যচর্চা হতো। সেই পত্রিকাগুলো হলো-‘ পূবালী’, ‘ত্রিপুরা’ যার প্রকাশকাল ১৯৩৪ খ্রিঃ/১৩৪৪ ত্রিপুরাব্দ এবং চল্লিশের দশকের মাঝামাঝি প্রকাশিত ‘নবজাগরণ’ পত্রিকা।
১৯৩৪ খ্রিঃ ত্রিপুরায় ‘পূবালী’ নামে একটি সাহিত্যপত্রিকা আত্মপ্রকাশ করে,তাতে গল্প লেখেন সতীশ দেববর্মা ‘কেরাণীর অপরাধ’ এবং বীরেন্দ্র ভট্টাচার্য-‘মায়াপুরী’ ।তবে এঁদের কারো গল্প তেমনভাবে পাঠকদের হাতে এসে পৌঁছায়নি,কেবলমাত্র তথ্যসূত্রে গল্পকারদের নামও গল্পনাম জানা যায়।
এই ‘রবি’ নামক সাহিত্য পত্রিকার ষষ্ঠ বর্ষের প্রথম সংখ্যায় (আষাঢ়-ভাদ্র সংখ্যা) প্রকাশিত গল্প ‘দায়মুক্ত’,লেখক অজিতবন্ধু দেববর্মা।তারপর ক্রমে ‘পরিচয়’ ও
‘প্রায়শ্চিত্ত’ গল্পটি সেখানে প্রকাশিত হতে দেখা যায় পরবর্তী সংখ্যাগুলোতে।
রাজন্যশাসিত ত্রিপুরায় রাজ-আনুকূল্যে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চর্চা বাঙালির গৌরবের বিষয় হলেও শামন্ততান্ত্রিক শাসনব্যাবস্থায় তৎকালীন স্বাধীন দেশীয় রাজ্য ত্রিপুরার জনগনের গতিহীন মন্থর জীবনযাত্রায় কিন্তু কোন লাঞ্ছনা-গঞ্জনা, প্রতিবাদ-প্রতিরোধ,বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দ্বন্দ জন্ম নেয়নি সেদিন,তাই নিশ্চিন্ত-নির্বিঘ্ন ত্রিপুরাবাসীর সাহিত্য জগতে সঙ্গত কারণেই অনুপস্থিত ছিল রাজনৈতিক উত্থান-পতন,সমাজ-রাষ্ট্রের পীড়ন জনিত ঘটনা, বেকারত্বের বিশাল চাপ বা লাঞ্ছিত-নীপিড়িত জনগনের ব্যাকুল মনোবেদনার কাহিনীর মতো ঘটনা।তাই হয়তো তখনকার ত্রিপুরার গল্পজগতে সৃজনশীল সাহিত্যিকের অনুপস্থিতি লক্ষ্যনীয়।চিন্তাশীল সমাজমনস্ক অভিজ্ঞতা গল্পকারের গল্পে প্রকাশিত হয়নি। যদি ত্রিশের দশকের ত্রিপুরার প্রকাশিত গল্পগুলোর গল্পগুলোর প্রতি নিবিষ্ট হওয়া যায়,তাহলে আমরা গল্পগুলোর মধ্যে ছোটগল্পের বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাই না।গল্পগুলো পাঠ করলে নিছকই বৈঠকী ধাঁচের গল্প বলে মনে হয়,আর যদি গল্পের বিষয়বস্তুর প্রতি খেয়াল করি তাহলে লক্ষ্য করব গল্পগুলো কখনো কল্পকাহিনী,ভৌতিক কাহিনী,কখনও ‘রাজকাহিনী’ আশ্রিত হয়ে রচিত হয়েছে।যার দরুণ সংহত পরিধিতে বাহুল্যবর্জিতভাবে মানুষের জীবনের কোন একটি বিশেষ ঘটনার উপর আলোকপাত করতে দেখা যায়নি তখনকার গল্পকারদের। তাই ত্রিশের দশকের গল্পগুলো যেন পাঠকের মনে অনুভূতির সঞ্চার করতে পারে না,গল্প তার গল্পত্বকে ছাড়িয়ে আলাদা বৈশিষ্ট্যের সন্ধান এনে দিতে পারে না পাঠককে। এ প্রসঙ্গে আমরা দু’একটি গল্পের অল্পবিস্তর আলোচনা করে তার চরিত্রলক্ষণ সম্পর্কে স্পষ্টীকরণ দেওয়ার চেষ্টা করবো।
‘রবি’ পত্রিকায় প্রকাশিত অজিতবন্ধু দেববর্মার দ্বিতীয় গল্প ‘পরিচয়’ এর শুরু একটি সান্ধ্যকালীন চায়ের আসরের আড্ডাকে কেন্দ্র করে। সেই প্রতিনিধিরা হলেন, অমিয়াংশু(গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র), ব্রজেশ, যোগেন ও লেখক স্বয়ং।সেখানে আমরা দেখতে পাই গল্পের নায়ক আড্ডায় সকলের মনযোগ আকর্ষণ ও আনন্দ দানের জন্য নিজের দাম্পত্য জীবনের গল্প শোনাত এবং এইসকল গল্প শুনে আড্ডার বাকী সদস্যদের মনে স্বামী-অনুরাগিনী এক নারীর চিত্র ভেসে আসে এবং একদিন সকলে মিলে অমিয়াংশু তথা গল্পের মূল নায়কের থেকে সেই স্বামী-অনুরাগিনী নারীর সাক্ষাৎলাভের উপায়স্বরূপ নিমন্ত্রণ আদায় করে নেয় গল্পের নায়কের থেকে।কিন্তু নিমন্ত্রণে যাওয়ার দিন সকালে একটি চিঠি এসে পৌঁছয় আড্ডার সদস্যদের হাতে যার উপর অমিয়াংশুবাবু কতৃক প্রেরিত এমন স্পষ্টীকরণ রয়েছে এবং শুধু তাই নয়, চিঠির শেষ ক’টি লাইন এরকম-
“বিয়ে আমি করিনি,কে দেবে আমার নিকট বিয়ে?কে বা করবে আমায় বিয়ে। আমার জীবনের যে অতৃপ্ত আকাঙ্খা তারই স্বপ্ন দেখতাম,সত্য ঘটনার মতো করে তোমাদের শুনিয়ে আনন্দ পেতাম,তোমরাও পেতে। সেদিনও যখন ফুরলো বিদায়”। ৩
-এভাবেই গল্পের সমাপ্তি। প্রসঙ্গত উল্ল্যেখ্য যে,লেখক এই অমিয়াংশু বাবুর চরিত্রের মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন মিথ্যেবাদী প্রতারক অমিয়াংশুকে এনে দাঁড় করিয়েছেন পাঠকের সামনে,অন্যদিকে আবার আসরের সকলের মনজয়ী কল্পজালে আবদ্ধ গল্পকথক অমিয়াংশুর মানসিকতার স্বচ্ছ্বতার দিকটিও ফুটিয়ে তুলেছেন অবলীলায়। তাই সে আড্ডার আসর থেকে বিদায় নেওয়ার পূর্বে সত্য কথাটি সকলকে জানান দিয়েই বিদায় নেয়।
এরকম একটা চরিত্রের মধ্য দিয়ে তৎকালীন ত্রিপুরার জনগনের মনের স্বাভাবিক সারল্যের দিকটির প্রতি আলোকপাত করাই বোধহয় লেখকের অভিপ্রায় ছিল। তবুও এই গল্পপাঠে একটা কথা বলতেই হয়,এই গল্পপাঠ পাঠকের মনে সজোর ধাক্কা দেয়নি যখন লেখক সমাপ্তি রেখাটি টানেন। শুধুমাত্র অমিয়াংশুর জন্য পাঠকের মনে সহানুভূতি জাগাতে সক্ষম হয়েছে।
অজিতবন্ধু দেবর্মার এরকমই আরেকটি গল্প হল ‘প্রায়শ্চিত্ত’, এটি ‘রবি’ পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর তৃতীয় গল্প।এই গল্পতেও গল্পনাম,চরিত্রবিন্যাস,ক্লাইম্যাক্স সবই আছে কিন্তু বিন্দুতে সিন্ধু দর্শনের স্বাদটুকু থেকে পাঠক যেন বঞ্চিত থেকে যান।গল্পটি তার মূল বিষয়বস্তুর পরিসীমিত গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ,গল্পত্বকে ছাড়িয়ে সেটি পাঠকের মনে নুতন ভাবনার জগতে অনুপ্রবেশ ঘটায়নি বলে মনে হয়েছে।
এই গল্পটি মূলত রাজকাহিনী আশ্রিত একটি গল্প,যেখানে আমরা দেখতে পাই প্রতিপক্ষ দুই দেশের রাজপুত্রের(অজয়াদিত্য এবং বিজয়াদিত্যের) মধ্যে প্রথমে একটি রনক্ষেত্রে নিজ তরোয়াল দিয়ে রক্ত বের করে একে অপরের শরীরে মিশিয়ে বন্ধুত্ব স্থাপিত হয় শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব ত্যাগ করে ,তারপর কুমার অজরাদিত্য বন্ধু বিজয়াদিত্যকে বললেন-
“আজ থেকে আমাদের সম্বন্ধ শুধু প্রাণের নয় রক্তেরো ।……আপনার দেহের একবিন্দু রক্তপাত আমার দেহের একবিন্দু রক্তপাত বলেই মনে করবো, আমার দেহের একবিন্দু রক্ত সম্বন্ধেও আপনার তাই ধারণা থাকবে”। ৪
এবং মাঝখানে অনেক বছর অতিক্রম হয়ে গেলে তাদের আবার সেই রণক্ষেত্রেই দেখা যায়,তবে বন্ধুত্বের দাবীতে নয়,প্রাণ হরণের জন্য। তখন তারা দুজনেই আর রাজপুত্র নন, রাজা। দীর্ঘ পাঁচ বছরের ব্যাবধানে একদিন রাজা বিজয়াদিত্যের রাজকার্য পরিচালনায় ব্যাস্ততার মধ্যেও অজয়াদিত্যের কথা মনে এলে তিনি বন্ধুর সাক্ষাৎলাভের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন এবং দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে ক্লান্ত বোধ করলে বিশ্রামের জন্য নিবিড় অরন্যের মধ্যে নিজ উত্তরীয় পেতে ঘুমিয়ে পড়েন ,ঠিক সেসময়ই এক বৃদ্ধের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে এবং পরে তিনি কথপোকথনের মাধ্যমে জানতে পারেন সে বৃদ্ধ তার পিতার বন্ধু ছিলেন এবং তিনিও একদা একটি রাজ্যের রাজা ছিলেন কিন্তু ঘটনাচক্রে তাঁর রাজ্য এবং রাজত্ব দুই’ই গেলে প্রাণরক্ষার্থে তিনি এই জঙ্গলের একটি কুটিরে স্ত্রী-কন্যা সহ বসবাস শুরু করেন।ঠিক তখনই রাজার বন্ধুর কথা প্রসঙ্গে আলোচনাক্রমে তিনি একজন রাজার কথাও বলেন , যিনি বৃদ্ধের কন্যার একদা পাণিগহণ করেছিলেন,কিন্তু তখনই বৃদ্ধের এক বন্ধুর পুত্রের সঙ্গে তার কন্যার বিয়ের কথাও চলছিল,ঠিক সেই সময়ই সেই বৃদ্ধ রাজত্ব হারান এবং পরে মন্ত্রীপুত্র থেকে জানতে পারেন সেই রাজা এখনও বিয়ে করেননি এবং সবসময় আনমনা হয়ে থাকেন ও শীর্ণকায় হয়ে গেছেন। বলাবাহুল্য বৃদ্ধা কন্যার প্রতীক্ষাই হয়তো তার কারণ। তারপর সেই বৃদ্ধের অনুরোধে তার কুটিরে আতিথ্য গ্রহণ করেন ।পরে বৃদ্ধ কন্যাকে দেখে প্রণয়ভাবের উদ্রেক হলে বৃদ্ধের ইচ্ছাতেই তাদের গান্ধর্বমতে বিবাহকার্য সম্পন্ন হলে বিজয়াদিত্য রাজ্যে প্রত্যাবর্তন করে প্রজাদের উদ্দেশ্যে একটি ভোজের আয়োজন করেন বিবাহ উপলক্ষ্যে। এদিকে, রাজা অজয়াদিত্য বন্ধু বিজয়াদিত্যের এহেন সুখবর শুনে তাকে না জানিয়ে উপস্থিত হয়ে চমক দেওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরেন সেই বিবাহ উৎসবে সামিল হওয়ার জন্য এবং উপস্থিত হয়ে যখন দেখতে পেলেন বিজয়াদিত্যের নব্যবিবাহিতা সিংহাসনে আসীনা রাণী তার সেই প্রথম প্রেমের বাগদত্তা রমনী তখন আত্মশ্লাঘায় জর্জরিত হয়ে তৎক্ষণাৎ তিনি সেই স্থান ত্যাগ করে বন-জঙ্গল,কাটাগাছ,বৃক্ষলতা পেরিয়ে দ্রুত তার নিজ রাজ্যে ফিরে এলে মন্ত্রী কি হয়েছে জানতে চাইলে রাজা বিজয়াদিত্য বলেন-
“রক্ত রক্ত মন্ত্রী, রক্ত- বিজয়াদিত্যের রক্ত। আমার গায়ে যা’ছিল সব আজ বেরিয়ে গেছে। আজ থেকে সে আমার বন্ধু নয়, শত্রু- আমার পূর্ব পুরুষদের নিকট তা’র পূর্বপুরুষেরা যা ছিল তার চাইতে ও বেশী”। ৫
তারপর, বন্ধু বিজয়াদিত্যের প্রাণ হরনের জন্য পূর্ন প্রস্তুতি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন সেনাসন্ততি নিয়ে এবং বিজয়াদিত্যের রাজ্যএ আগুন লাগিয়ে দেন এবং শুধু তাই নয় বন্দী করে আনান রাজা ও রাণীকে সেই রণক্ষেত্রে,যে রণক্ষেত্রে একদা তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব স্থাপন হয়েছিল,তবে আর বন্ধুত্ব নয় রাজার প্রাণ নিয়েই তবে প্রতিশোধ নিতে চান তিনি।পরে অবশ্য রাণীকে মুক্তি দেওয়ার আদেশ দেন,কিন্তু বিজয়াদিত্যের মৃতু যখন অনিবার্য হয়ে গেল তখন দেখা যায় অজয়াদিত্যের হাত থেকে বর্শা খসে পড়ল এবং মনে পড়ে গেল সেদিনের কথা,যেদিন তারা একই জায়গায় দাঁড়িয়ে বন্ধুত্যের সম্পর্কে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।সঙ্গে সঙ্গে দু’হাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে জড়িয়ে নিলেন বন্ধু বিজয়াদিত্যকে রাজা অজয়াদিত্য এবং সপ্তাহখানেক পর রাজা বিজয়াদিত্যের কাছে খবর এল রাজা অজয়াদিত্য আর নেই ,পাহাড়ের উপর থেকে গড়িয়ে পড়ে তার মৃত্যু হয়েছে।শুধু তাই নয়,অজয়াদিত্যের সাক্ষরিত একটি কাগজ পাওয়া গেছে,যেখানে বিজয়াদিত্যেকে তিনি তার একমাত্র উত্তরাধিকারী নির্বাচন করে গেছেন।বন্ধুত্বকে ভূল বুঝে তার রাজ্য ধ্বংস করার প্রায়শ্চিত্ত করে গেলেন বোধকরি রাজা অজয়াদিত্য,এখানেই গল্পনামের সার্থকতা।তবে গল্পপাঠে ছোটগল্পের বৈশিষ্ট্য কতটুকু প্রস্ফূটিত হল সে ভার পাঠকের।
‘রবি’ নামক সাহিত্য পত্রের প্রায় সমসাময়িক কালে ‘ত্রিপুরা নামক’ একটি সাহিত্য পত্রে গল্প লেখেন-মুরারী ঘোষ, বিনোদলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজেশ্বর মিত্র, বিকচ চৌধুরী প্রমুখ।তবে পত্রিকাটির আয়ুষ্কাল খুবই কম থাকায় গল্পগুলো তেমনভাবে আমাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি । ১৯৮৫ খ্রিঃ প্রকাশিত ‘পাঁচ দশকের গল্প’ সকলনে রাজেশ্বর মিত্রের ‘স্যামসন বক্স’ গল্পটি পাওয়া যায়,গল্পটির রচনাকাল ১৯৩৪ খ্রিঃ, ‘ত্রিপুরা’ পত্রিকার কোন এক সংখ্যায়।
‘স্যামসন বক্স’ গল্পটি একটি ভূতের কাহিনী আশ্রিত গল্প।যেখানে স্যামসন নামক এক খ্রীষ্টান যুবক ম্যাডিক্যাল কলেজে ছয় বছরের জায়গায় বারো বছর পড়েও ফেল করার কাহিনী বর্ণিত,সঙ্গে তার কলেজ ত্যাগের ঘটনাও। কিন্তু,তার ফেলে যাওয়া অস্থিপূর্ণ একটি বেতের ঝুড়ি যার নামে গল্পের নামকরণ,সেটি হল স্যামসন বক্স। অর্থাৎ স্যামসন নামক যুবকের ফেলে যাওয়া অস্থিপূর্ণ বেতের বাক্স। এই বাক্সটির একটি ভৌতিক ক্ষমতা ছিল,যার জন্য সেই বাক্সটির সংস্পর্শে আসা সকল ব্যাক্তিই নিজ নিজ ক্ষেত্রে অকৃতকার্য হন।এটাই গল্পের মূল বিষয় ভাবনা।
এই প্রসঙ্গে গল্পটির বর্ণনাভঙ্গী সম্পর্কে একটি কথা না বললেই নয়, গল্পটির প্রথম পরিচ্ছেদে স্যামসন বাক্সটিকে নিয়ে যে বিভীষিকার সৃষ্টি হয়েছিল তার রেশ টেনে শেষ পরিচ্ছেদে লেখক যখন বলেন-
‘ব্যাপারটা যখন এইরূপ দাঁড়াইয়াছে,তখন আমাদের বিজনবাবু সদম্ভে বাক্সটিকে চ্যালেঞ্জে করিলেন।তাঁহার শোচনীয় পরাজয়ের কাহিনী বলিয়াই গল্প শেষ করিব’ ৬
-এই যে ‘গল্পটি শেষ করব’ কথাটি শুনে যেন মনে হচ্ছে লেখক কোন বৈঠকে আড্ডা দিতে বসেছেন পাঠকদের নিয়ে এবং সেখানে তিনি কোথা থেকে শুরু করবেন আর কোথায় শেষ করবেন তা পাঠককে অগ্রিম বলে দিচ্ছেন।এই গল্পপাঠ পাঠককে বঙ্কিমের বৈঠকী আলাপের স্মৃতি মন্থনের দিকে আগ্রহী করে তোললেও সার্থক ছোটগল্পের রসাস্বাদনের দিকে মনোগ্রাহী করতে পারে নয়া নিঃসন্দেহে।
তাছাড়াও যে বিজনবাবুর কথা লেখক উত্থাপন করেছেন,সেই বিজনবাবুর পরিচয় তিনি অবলীলায় এড়িয়ে গেছেন,যা একজন সার্থক ছোটগল্প রচয়িতার গল্প রচনার পরিপন্থী।পাঠককে বাধ্য হয়ে বিজনবাবুর পরিচিতি সম্পর্কে একটি মনগড়া চিত্র এঁকে নিতে হয় এই ভেবে যে,সেই বিজনবাবু সম্ভবত হোষ্টেলের বা ম্যাডিকেল কলেজের একজন কর্মচারী।
পূর্বে উল্লেখিত গল্পের আলোচনা থেকে আমাদের একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠে যে,ত্রিশের দশকের গল্পের মান নিম্নমানের ছিল। গল্প-পরিসর,ভাষা,রসবোধ গল্পজাল এমনকি পাঠকের দীনতা হয়তো তখনকার গল্পকে প্রাণবন্ত করে তুলতে পারেনি। পাঠক হৃদয়ে গল্প কবিতার মতো স্থান করে নিতে পারেনি।সেজন্য পাঠকে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হল সার্থক ছোটগল্পের জন্য। আর সেই অধীর আগ্রহমিশ্রিত প্রতীক্ষার অবসানের কাল হল চল্লিশের দশক।চল্লিশের দশক থেকেই পাঠকের দ্বারে পৌঁছে গেল রসমিশ্রিত হৃদয়গ্রাহী নিটোল গল্প।
চল্লিশের দশকের মাঝামাঝি সময়ে প্রকাশিত ‘নবজাগরণ’ নামক সাপ্তাহিক পত্রিকাকে কেন্দ্র করে একদল তরুণ লেখকগোষ্ঠীর জন্ম নেয় ত্রিপুরার বাংলা সাহিত্যে। এঁরা হলেন-হরিদাস চক্রবর্তী, বিমল চৌধুরী, সৈয়দ নুরুল হুদা, পৃথ্বিশ ভট্টাচার্য, বিধূভূষণ ভট্টাচার্য, অনিলচন্দ্র ভট্টাচার্য। এঁদের প্রায় নিয়মিত লেখা গল্প তখনকার ‘নবজাগরণ’ পত্রিকার হাত ধরে ত্রিপুরার বাংলা গল্প সাহিত্যকে কিছুটা সমৃদ্ধ করেছিল।
প্রকৃতপক্ষে ত্রিপুরার বাংলা ছোটগল্প তার স্বাতন্ত্র্য নিয়ে উপস্থিত হয়েছে ভারতের স্বাধীনতালাভের পর। দেশবিভাগের ফলে পূর্ববঙ্গ থেকে লক্ষ লক্ষ ছিন্নমূল অসহায় মানুষ পাশ্ববর্তী রাজ্যগুলোতে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য চলে আসতে বাধ্য হন।এঁদের একটা অংশ ক্ষুদ্র রাজ্য ত্রিপুরায় আশ্রয় নেন। ফলে জনসংখ্যার বিন্যাসের দিক থেকে এই ক্ষুদ্র রাজ্যটি এক কল্পনাতীত সমস্যার সম্মুখীন হয় ।১৯৪৭ খ্রিঃ থেকে প্রায় দেড় দশকের উদ্বাস্তু স্রোত ত্রিপুরাকে কাঁপিয়েছে,আর সেই কম্পন তার সাহিত্যকেও এগিয়ে দিয়েছে বেশ কিছুটা। প্রবল জনস্ফীতি ও তজ্জনিত সমস্যায় জর্জরিত ত্রিপুরা আকস্মিকভাবে মূল্যবোধহীনতা ও এক অনিশ্চিত অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। স্বাভাবিকভাবে জনজীবন যখন বিপর্যস্ত,তখন সাহিত্যসৃষ্টির অনুকূল পরিবেশে কিছুটা বাঁধা আসলেও হরিদাস চক্রবর্তী, বিমল চৌধুরী, সৈয়দ নুরুল হুদা প্রমুখ গল্পকারগন বেশ কিছু সার্থক গল্প জন্ম দিতে পেরেছেন।
চল্লিশের দশকে সার্থক প্রথাসিদ্ধ ছোটগল্প লিখে যিনি ত্রিপুরার গল্পসাহিত্যের সূচনাপর্ব রচিত করেছেন,তিনি হলেন বিমল চৌধুরী। চল্লিশের দশকের গল্প হিসেবে বিমল চৌধুরীর ‘ জাগরণ’ গল্পটি একটি ভিন্ন মাত্রা এনে দিতে পেরেছে ত্রিপুরার বাংলা গল্পসাহিত্যে। গল্পটি ১৯৪৭খ্রিঃ রচিত হয়েছিল কিন্তু গল্পটিতে তৎকালীন সমাজব্যবস্থার বাস্তবচিত্র এমনভাবে ফুটে উঠেছিল যে এই সাহসী গল্পকারের গল্পটি প্রকাশের সাহসিকতা দেখাতে পারেনি কোন সম্পাদক। তাই গল্প রচনার দু’বছর পর ১৯৪৯খ্রিঃ জেলফেরত নেতা প্রভাত রায়ের ‘চিনিহা’(পাক্ষিক, ‘চিনিহা’ ত্রিপুরী শব্দ,অর্থ ‘আমাদের দেশ’,পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৪৮খ্রিঃ) নামক সাহিত্য-সংবাদ পত্রিকায় গল্পটি প্রকাশিত হয় ,তাছাড়া জিতেন্দ্র পালের ‘জাগরণ’(১৯৫৪খ্রিঃ) নামক দৈনিক বাংলা পত্রিকায়ও এটি প্রকাশিত হয় বলে জানা যায়,এবং পরে অবশ্য ১৯৭৩ খ্রিঃ ‘মানুষের চন্দ্রবিজয় ও তারানাথ’ শিরোনামে তাঁর একটি গল্পগ্রন্থ বের হয় পৌণমী প্রকাশনী থেকে এবং সেখানে প্রথম গল্প হিসেবে স্থান পায় ‘জাগরণ’ গল্পটি।এছাড়াও গল্পগ্রন্থটিতে আরও নয়টি গল্প রয়েছে ।
গল্পকার বিমল চৌধুরীর আবির্ভাব একদিকে যেমন সামন্ত প্রথায় আবদ্ধ ত্রিপুরার উপজাতি জীবনের সমস্যার কেন্দ্রে আঘাত করে ,তেমনি তাঁর গল্প সমকালীন বাস্তবতামণ্ডিত জীবনচিত্রকে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে।বিমল চৌধুরী দেশবিভাজন দেখেছেন,আর দেশবিভাজনের আগে এবং পরে দাঙ্গা প্রত্যক্ষ করেছেন। ত্রিপুরার পাহাড়ী উপজাতিদের জুম টিলার জীবন দেখেছেন,দেখেছেন বাঙালী জীবনের উদ্বাস্তুর সকরুণ চিত্র। সেইসঙ্গে তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন সন্ধিক্ষণে মানুষের অবিশ্বাসের নগ্নরূপ,দেখেছেন মনুষ্যত্বের চরম বিকাশ।
‘জাগরণ’ জুমচাষী কালিগাই ও ত্রিপুরার শহরচেনা ছেলে নগুরাইয়ের জাগরণের কাহিনী। নানাভাবে অসহায়, ক্ষুধায় নিরন্ন ,রোগে জর্জরিত ওঝায়-ঝাড়ফুকে-মৃত্যুর সঙ্গে প্রতিনিয়ত সংগ্রামরত উপজাতি সমাজের জাগরণের কাহিনী।
আদিবাসী যুবক নগুরাইয়ের পিতা কালিগাই,মা,বোন কুকুই ও ভাই বিশরাই এবং প্রিয়তমা রুনুতিকে নিয়েই গল্পকাহিনী আবর্তিত।সেইসঙ্গে রয়েছে ঝাড়ফুক, উপদেবতার ভর ইত্যাদি নান কুসংস্কারের ছবি। রয়েছে রোগশোক থেকে পরিত্রাণের উপায়স্বরূপ ওঝার উপস্থিতি।
নগুরাই দীর্ঘদিন আগরতলায় ছিল,যেখানে পাহাড়ী আদিবাসীরা প্রায় কেউই যায় না,আর গেলেও বেশীদিন থাকতে পারে না। সে গিয়েছিল পেটের জ্বালায় অনন্যোপায় হয়ে। দুর্বিক্ষ থেকে মুক্তি পেতে রাজার কাছে সাহায্য চাইতে ,কারণ সেবার দুর্বিক্ষ এসেছিল ত্রিপুরার মাটিতে। কারোর জুমেই ভাল ফসল হয়নি সেবার ।কুড়ল, বুনো আলু,শাকপাত পর্যন্ত ফুরিয়ে গিয়েছিল। অর্ধাহার,অনাহার, অখাদ্য-কুখাদ্যে মৃত্যুর ঢল নেমেছিল পাহাড়ী জনজীবনে।
নগুরাই একদিকে যেমন দেখেছে রাজপ্রাসাদের চোখ ধাধানো ঐশ্বর্য, বড় বড় প্রাসাদ-অট্টালিকা,গাড়ি-ঘোড়া ও বিলাস ভোগের উপকরণ,তেমনি দেখেছে মহাজনদের ফলাও করা কারবার । সেইসঙ্গে অপরদিকে প্রত্যক্ষ করেছে নেংটি পরে অর্ধাহারে অনাহারে বুনো পশুর সঙ্গে লড়ে ধান-তিল-কার্পাস ফলানোর ছবি। আরও দেখেছে সেইসকল ধান-তিল-কার্পাস সরল আদিবাসীদের নিকট থেকে কম মূল্যে কিনে এনে শহরে বা রাজ্যের বাইরে চড়া দামে বিক্রী করে মুনাফালোভী মহাজনদের চেহারা।
রাজা তার আত্মীয়-স্বজনদের জন্য সমস্ত ব্যবস্থা করে রেখেছেন শহরে। স্কুল, হাসপাতাল,চাকুরি, রাস্তাঘাট, ব্যাবসা সবকিছুতেই শহরবাসী একচেটিয়া অধিকার অথচ একই জাতের মানুষ হওয়া সত্ত্বেও কেন এত বৈষম্য তা বুঝতে পারে না নগুরাই। বৃষ্টি নির্ভর ফসল না হলেও বুনো ফলমূল লতাপাতা খেয়ে জীবনধারণ করার চেষ্টা করে আদিবাসীরা, অসুস্থ হলে চিকিৎসার সুব্যবস্থার অভাবে উপায় না পেয়ে ওঝা নির্ভর হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে দেখেছে তার বাবা কালীগাই আর সে ও তার প্রেমময়ী নারী রুনুতিকে। পিতা কালিগাইও অসুস্থ, কিন্তু চিকিৎসার পরিবর্তে ওঝা নির্ভর হতে বাধ্য হয় গ্রামবাসীর কথায় এবং পরে তার একমাত্র সম্বল বাবাকেও হারায়। রুনুতির সঙ্গে তার প্রেম সমাজে গ্রহণযোগ্য ছিল নয়া । কিন্তু মৃত্যু শয্যায় পিতার অস্ফূট উচ্চারণ-
‘তুই একা, রুনুতিকে তুই বিয়ে করিস, সে তোকে চায়-আমরা সব পাহাড়ি এক’। ৭
-পিতার শেষ ইচ্ছা তার প্রাণশক্তির জাগরণ ঘটায়। তাই, গল্পের শেষে মৃত পিতার মুখের দিকে চেয়ে সে বলে উঠে-
‘আমরা সব পাহাড়িয়া এক। মুখ বুজে আর তিলে তিলে ক্ষয় হওয়া নয়। আমাদের বাঁচতে হবে’ । ৮
দীর্ঘদিনের অবহেলার চাপা দাবানলে আগুন জ্বলে উঠে নগুরাইয়ের ‘আমরা সব পাহাড়িয়া এক’ উক্তির মধ্যে। সেইসঙ্গে প্রান্তকায়িত মানুষের বিদ্রোহী সত্তা নগুরাইয়ের মধ্য দিয়ে গতি পায়। নগুরাইয়ের জাগরণ গোটা আদিবাসী সমাজের জাগরণের প্রেরণা জোগায়।
গল্পকার বিমল চৌধুরী সমকালীন জীবনের প্রতি দায়বদ্ধ ছিলেন,তাই তার গল্পে সমাজবাস্তবতার সাক্ষাত মেলে।গল্পকার ত্রিপুরার মাটি ও মানুষের সঙ্গে অতোপ্রতভাবে জড়িয়ে ছিলেন। তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন স্বাধীনতার পূর্ব ও পরের ত্রিপুরার ছবি, যা তার গল্পে রসদ জুগিয়েছিল। একদিকে ,আসন্ন স্বাধীনতা জনিত ত্রিপুরার শেষ রাজা বীরবিক্রমে ব্যস্ততা,অপরদিকে দুর্ভিক্ষ জনিত পরিস্থিতির বলি পাহাড়ী আদিবাসী। এ’দুই মিলে ত্রিপুরার অবস্থা তখন সমস্যায় জর্জরিত। গল্পকার সে সময়টিকে নিজ চোখে দেখেছেন। নিরন্ন মানুষ সেদিন রাজদ্বারে সাহায্যের প্রার্থনা জানালেও তাদের প্রার্থনা সেদিন ব্যর্থ হয়েছিল। তাছাড়া গল্পকার নিজে চিকিৎসক থাকার সুবাদে আদিবাসীদের রোগ জর্জরিত অবস্থার প্রত্যক্ষদর্শীও ছিলেন। সেইসময় একদল সুযোগসন্ধানী ভোগী শ্রেণীর আবির্ভাব ঘটে, যাদের উদ্দেশ্য ছিল রাজদ্বারে নিরন্ন প্রজাদের বঞ্চিত করে রাখা। এমনই সংকটময় পরিস্থিতি থেকে কাহিনীজাল বুনেছিলেন গল্পকার নগুরাই চরিত্রকে নিয়ে এবং তার চরিত্রের মাধ্যমে গোটা সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যেন প্রতিবাদের জোয়ার উঠেছিল আদিবাসী সমাজে । সেদিক থেকে গল্পটি একদিকে যেমন গল্পকারের সাহসিকতার দলিল অপরদিকে ত্রিপুরার বাংলা গল্পসাহিত্যের প্রথম সার্থক ছোটগল্পের দাবী রাখে নিঃসন্দেহে ।
গল্পটিতে মূলত ত্রিপুরার অবহেলিত পার্বত্য আদিবাসীর বিভিন্ন সমস্যার প্রতি আলোকপাত করেছেন,যা বৃহৎ বাংলার সাহিত্যে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। পার্বত্য ত্রিপুরার ভূমিপুত্রদের মধ্যে শহরবাসী ও পাহাড়ির ব্যবধান ছিল, আর এই পার্বত্য ত্রিপুরার ভূমিপুত্রদের দুর্দশার কাহিনী একেবারেই বাস্তবের মাটি থেকে উঠে আসা ।চল্লিশের দশক থেকে রচিত গল্পগুলোর মধ্যে আস্তে আস্তে ত্রিপুরার নানান ছোটবড় সমস্যা উঠে আসতে শুরু করে,যা বাংলা সাহিত্যের বৃহত্তর ভুবনে অনেকটাই অপরীচিত এবং অনুপস্থিত। সেই দিক থেকে বলা যায়, “নজাগরণ” পত্রিকার (বিমল চৌধুরীর ‘জাগরণ’ গল্পের )হাত ধরেই ত্রিপুরার বাংলা সাহিত্যে সার্থক ছোটগল্পের পথচলা।
তথ্যসূত্র-
১। দেববর্মন খগেশ, “ত্রিপুরায় অন্য রবীন্দ্রনাথ”, প্রান্তিক প্রকাশনী,কলকাতা,১৪ ডিসেম্বর ২০০৭খ্রিঃ,পৃষ্টা-১৫।
২। দেববর্মা নরেন্দ্র কিশোর ও সেন কালীপ্রসন্ন সম্পাদিত, “রবি” পত্রিকা, প্রথম বর্ষ,তৃতীয় সংখ্যা,পৌষ ১৩৩৪ত্রিপুরাব্দ(১৯২৪ খ্রিঃ),পৃষ্টা-১২২, আগরতলা, ত্রিপুরা।
৩। ঘোষ সুখময় ও চৌধুরী কুমার বিকচ সম্পাদিত, “পাঁচ দশকের গল্প”, ত্রিবেগ প্রকাশনী,আগরতলা, ত্রিপুরা,১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দ, পৃষ্ঠা-৩।
৪। দেববর্মা নরেন্দ্রকিশোর সম্পাদিত, “রবি” পত্রিকা ষষ্ঠ বর্ষ,চতুর্থ সংখ্যা,পৃষ্ঠা-২৩১, আগরতলা ত্রিপুরা, চৈত্র ১৩৪০ ত্রিপুরাব্দ(১৯৩০ খ্রিঃ) ।
৫। তদেব, পৃষ্ঠা-২৩৭ ।
৬।ঘোষ সুখময় ও চৌধুরী কুমার বিকচ সম্পাদিত, “পাঁচ দশকের গল্প”, ত্রিবেগ প্রকাশনী,আগরতলা, ত্রিপুরা,১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দ, পৃষ্ঠা-৬।
৭। চৌধুরী বিমল, “মানুষের চন্দ্রবিজয় ও তারানাথ”, পৌণমী প্রকাশন, আগরতলা,ত্রিপুরা,দ্বিতীয় সংস্করণ ২০০২ খ্রিঃ, পৃঃ- ৮ ।
৮। তদেব, পৃঃ-
৮ ।
সহায়ক গ্রন্থ/ গ্রন্থপঞ্জি
আকর গ্রন্থ
১। বন্ধ্যোপাধ্যায় ডঃ অসিতকুমার , “বাংলা সাহিত্যের সম্পূর্ণ ইতিবৃত্ত”, মডার্ণ বুক এজেন্সি প্রাইভেট লিমিটেড,কলকাতা ,পশ্চিমবঙ্গ, পুনর্মুদ্রণ ২০০২-২০০৩খ্রিঃ।
২। মজুমদার উজ্জ্বলকুমার, “ সাহিত্য ও সমালোচনার রূপ-রীতি”, দেজ পাব্লিকেশন,কলকাতা,পশ্চিমবঙ্গ, তৃতীয় সংস্করণ ২০০৮ খ্রিঃ।
৩। মজুমদার উজ্জ্বলকুমার, “গল্পপাঠকের ডায়ারি”, বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদ প্রকাশনী,প্রথম সংস্করণ ২০০৫ খ্রিঃ,কলকাতা পশ্চিমবঙ্গ।
৪।চৌধুরী কুমুদকুণ্ডু, “ ত্রিপুরার ভাষাচর্চাঃবাংলা
ও কক্বরক”, অক্ষর প্রকাশনী,আগরতলা, ত্রিপুরা, প্রথম সংস্করণ ২০০৬খ্রিঃ ।
৫। রায় পান্নালাল, “রাজন্য ত্রিপুরায় বাংলা ভাষা”, পৌণমী প্রকাশনী, প্রথম সংস্করণ,২০০৮ খ্রিঃ,
আগরতলা,ত্রিপুরা।
৬। দেববর্মণ খগেশ, “ত্রিপুরায় অন্য রবীন্দ্রনাথ”, প্রান্তিক প্রকাশণী, প্রথম সংস্করণ ২০০৭খ্রিঃ,সল্টলেক কলকাতা,পশ্চিমবঙ্গ।
৭। চৌধুরী বিমল, “মানুষের চন্দ্রবিজয় ও তারানাথ”, পৌণমী প্রকাশন, দ্বিতীয় সংস্করণ ২০০২ খ্রিঃ, আগরতলা,ত্রিপুরা,
৮।দত্ত রমাপ্রসাদ, “ত্রিপুরার প্রাচীন পুঁথি প্রসঙ্গে”, পৌণমী প্রকাশনী,প্রথম সংস্করণ ১৯৯৯খ্রিঃ,আগরতলা, ত্রিপুরা।
৯।পাল জিতেন্দ্র চন্দ্র, “ত্রিপুরার ইতিবৃত্ত”, সৈকত প্রকাশনী,প্রথম সংস্করণ ১৯৯২খ্রিঃ, আগরতলা, ত্রিপুরা।
১০।দত্ত রমাপ্রসাদ, “ঐতিহ্যের আলোকে ত্রিপুরা”, তথ্য-সংস্কৃতি ও পর্যটন দপ্তর,ত্রিপুরা সরকার কতৃক প্রকাশিত,২০১০খ্রিঃ, আগরতলা ,ত্রিপুরা।
সংকলন গ্রন্থঃ
১। দত্ত রমাপ্রসাদ ও দাস নির্মল, “শতাব্দীর ত্রিপুরা”, অক্ষর প্রকাশনী, প্রথম সংস্করণ ২০০৫ খ্রিঃ, আগরতলা, ত্রিপুরা।
২। ঘোষ সুখময় ও চৌধুরী বিকচ কুমার, “পাঁচ দশকের গল্প”,ত্রিবেগ প্রকাশনী, আগরতলা, ত্রিপুরা ১৯৮৫ খ্রিঃ ।
৩। দত্ত রমাপ্রসাদ, “ রামাপ্রসাদ দত্তের প্রবন্ধমালা”, রাইটার্স পাব্লিকেশন, প্রথম সংস্করণ, ২০০৮খ্রিঃ, আগরতলা, ত্রিপুরা।
পত্র-পত্রিকাঃ
১। দেববর্মা নরেন্দ্র কিশোর ও সেন কালীপ্রসন্ন সম্পাদিত, “রবি” পত্রিকা, প্রথম বর্ষ,তৃতীয় সংখ্যা,পৌষ ১৩৩৪ত্রিপুরাব্দ(১৯২৪ খ্রিঃ), আগরতলা, ত্রিপুরা।
২। দেববর্মা নরেন্দ্রকিশোর সম্পাদিত, “রবি” পত্রিকা ষষ্ঠ বর্ষ,চতুর্থ সংখ্যা, চৈত্র ১৩৪০ ত্রিপুরাব্দ(১৯৩০ খ্রিঃ) আগরতলা ত্রিপুরা, ।
No comments:
Post a Comment